ডাক্তার জাকির নায়েক কুরআন ও হাদীসের অপব্যাখ্যা করছেন
মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী
http://adarsha-nari.com/?p=416
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
গত সংখ্যায় ডাক্তার জাকির নায়েকের মনগড়া অর্থ-ব্যাখ্যা করে পবিত্র কুরআন ও হাদীসের বর্ণনা বিকৃতি ও অপব্যাখ্যা সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে দাহাহা শব্দের অর্থ বিকৃতি, সূরাহ ফুরকানের ৬১ নং আয়াতের অপব্যাখ্যা, সূরাহ ফূরকানের ৫৯ নং আয়াতের মনগড়া বিশ্লেষণ, সূরাহ যারিয়াতের ৪৭ নং আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা প্রভৃতি আলোচনা করা হয়েছে।
এভাবে বহু আয়াত ও হাদীসের অপব্যাখ্যা করে ডাক্তার জাকির নায়েক মুসলমানদের মধ্যে গোমরাহী সৃষ্টি করেছেন। নিম্নে এ সম্পর্কে আরো কয়েকটি বিষয় পেশ করা হলো।
গর্ভস্থ সন্তানের ব্যাপারে আল্লাহর ইলম প্রসঙ্গে বিধর্মীদের প্রশ্নে জব্দ হয়ে কুরআনের আয়াতের অর্থ পরিবর্তন করেছেন ডাক্তার জাকির নায়েক
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন :
এ আয়াতে ৫টি বিষয় বর্ণনা করে এসব গাইবের ইলম বা অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান একমাত্র মহান আল্লাহরই রয়েছে, অন্য কারো নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত পঞ্চ বিষয়ের একটি হচ্ছে : নারীদের গর্ভাশয়সমূহে কী রয়েছে তার জ্ঞান। অর্থাৎ নারীদের কার গর্ভে কী সন্তান রয়েছে, তা ছেলে না মেয়ে বা কারো গর্ভে অন্যকিছু রয়েছে কিনা ইত্যাদি গাইবের বিষয় মহান আল্লাহই জানেন, অন্য কেউ নয়।
এ বিষয়টিকে সূরাহ রা‘দের ৮ নং আয়াতে আরো স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। সেখানে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন :
“আল্লাহ জানেন : প্রত্যেক নারী যা গর্ভধারণ করে এবং যা গর্ভাশয়সমূহ সংকুচিত করে ও বর্ধিত করে। আর প্রত্যেক জিনিস তাঁর নিকটে এক নির্দিষ্ট পরিমাপে রয়েছে।” (সূরাহ রা‘দ, আয়াত নং ৮)
অনুরূপভাবে বুখারী শরীফের হাদীসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে ‘মাফাতীহুল গাইব’-এর বিশ্লেষণে গর্ভস্থ সন্তানের প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর ইল্ম সম্পর্কে বলা হয়েছে :
“গর্ভাশয়সমূহ যা বর্ধিত ও সংকুচিত করে, তা কেউ জানে না আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া।” (দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী, তাফসীর অধ্যায়)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) গর্ভাশয়ের এ সংকোচন ও বর্ধন সম্পর্কে ব্যাখ্যা করে বলেনÑ“এর অর্থ হচ্ছেÑবাচ্চার শরীর ও গর্ভের মেয়াদ সংকোচিত ও বর্ধিত হওয়া।” (দ্রষ্টব্য : তাফসীরে ইবনে কাছীর, ৪র্থ খ-, ৩৫৭ পৃষ্ঠা)
এতে বুঝা যাচ্ছেÑসূরাহ লুক্বমানের বর্ণিত আয়াতটির মর্ম হচ্ছে : নারীদের গর্ভস্থ বাচ্চার প্রকার অর্থাৎ ছেলে বা মেয়ে হওয়া অথবা তার ধরন কী এবং গর্ভে কম সময় থাকবে, না বেশী সময় থাকবে বা কত সময় থাকবেÑতা মহান আল্লাহই জানেন।
উক্ত আয়াতের এ তাফসীর-ব্যাখ্যাই রাসূলুল্লাহ (সা.), সাহাবায়ে কিরাম (রা.), তাবিয়ীন, তাবে তাবিয়ীন ও আইম্মায়ে মুফাসসিরীন (রহ.) থেকে বর্ণিত হয়ে এসেছে। যেমন, আয়াতটির শানে নুযূল প্রসঙ্গে হযরত ইবনে আবী হাতিম ও ইবনে জারীর (রহ.)-এর সূত্রে ইমামে তাফসীর হযরত মুজাহিদ (রহ.) বর্ণনা করেন, জনৈক গ্রাম্য ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট এসে বললেন, আমার স্ত্রী গর্ভবতী। আপনি বলে দিন, সে কী ভূমিষ্ট করবে? এ ছাড়াও সেই ব্যক্তি বৃষ্টির ব্যাপারে এবং তার মৃত্যু কোথায় কখন হবেÑসে ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন। তখন তার জবাবে সূরাহ লুক্বমানের উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়। (দ্রষ্টব্য : তাফসীরে ইবনে কাছীর, ৬ষ্ঠ খ-, ৩৫৬ পৃষ্ঠা)
তেমনিভাবে হযরত আবু উমামা ও সালামাহ্ ইবনে আকওয়া‘ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, এক ব্যক্তি তার উটের গর্ভাশয় এবং অপর এক ব্যক্তি তার ঘোড়ার গর্ভের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের প্রশ্নের উত্তরে উক্ত আয়াত পাঠ করলেন। (দুররে মানসূর, ২য় খ-, ৫৩১ পৃষ্ঠা)
এ সকল প্রশ্নকারীগণ গর্ভস্থ বাচ্চার প্রকার ও ধরন সম্পর্কে প্রশ্ন করেছেন, যার উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) উক্ত আয়াত পেশ করেছেন। এতে বুঝা যাচ্ছে : আয়াতটিতে বিশেষভাবে গর্ভাশয়ের প্রকার অর্থাৎ ছেলে না মেয়ে বা তার ধরন কী সে সম্পর্কে বলা হয়েছে।
আয়াতটির এ ব্যাখ্যা বর্ণনা করে প্রসিদ্ধ তাবিয়ী ইমামুত তাফসীর হযরত কাতাদাহ্ (রহ.) বলেন :
“আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে নাÑগর্ভাশয়ে কী আছে; তা ছেলে না মেয়ে অথবা ফর্সা না কালো!” (দ্রষ্টব্য : তাফসীরে ইবনে কাছীর, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৫৬ পৃষ্ঠা)
এক্ষেত্রে বিধর্মীরা অভিযোগ উত্থাপন করে যে, বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে তো মানুষ আল্ট্রাসনোগ্রাম করে জানতে পারছে যে, গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে? তাহলে কুরআন শরীফের কথা রইল কোথায় যে, তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না?
এর জবাব হচ্ছে : বিষয়টি না বুঝার কারণেই এমন প্রশ্নের অবতারণা হয়েছে। আয়াতটিতে মহান আল্লাহর ইল্মে গাইব-এর বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে – যা মাফাতিহুল গাইব-এর অন্তর্ভূক্ত, যে সম্পর্কে সূরাহ আন‘আমে ইরশাদ হয়েছে :
“আল্লাহর নিকটই গাইবের চাবিকাঠিসমূহ; তিনি ব্যতীত সেগুলো কেউ জানে না।” (দ্রষ্টব্য : সূরাহ আন‘আম, আয়াত নং ৫৯)
আর মহান আল্লাহর এ ইল্মে গাইব হচ্ছে যাবতীয় অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কিত এমন চাক্ষুশ জ্ঞান – যা কোন মাধ্যম বা উপকরণ ব্যতীতই সরাসরি এবং নিশ্চিতরূপে বিদ্যমান রয়েছে। আর তা একই সাথে একই সময়ে সারা সৃষ্টিজগত সম্পর্কে সম্যক অবগতির বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। যেমন, উক্ত গর্ভসম্পর্কিত জ্ঞানের আয়াতে বহুবচন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে এবং তার সাথে আলিম-লাম যুক্ত করে জিন্স () বা জাতিসত্তা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীর সকল গর্ভবতীজাতির গর্ভাশয়সমূহে কী আছে, তার সার্বক্ষণিক শাশ্বত জ্ঞান মহান আল্লাহরই রয়েছে।
বলা বাহুল্য, এ ধরনের জ্ঞান কোন মাখলূকেরই হতে পারে না। মানুষ আজ গর্ভস্থ সন্তান সম্পর্কে যে জ্ঞান লাভ করতে পারছে, তা একেতো বিনা মাধ্যমে নয়, বরং আল্ট্রাসনোগ্রাম, ডিজিটাল এক্সরে প্রভৃতির মাধ্যমে; দ্বিতীয়ত সেই যন্ত্রলব্ধ জ্ঞান নিশ্চিত বা অকাট্য নয়, তা ধারণাজ্ঞান মাত্রÑযা ভুল প্রমাণিত হতেও দেখা যায়; আবার একই সঙ্গে একই সময়ে সারা পৃথিবীর সকল গর্ভধারীণী নারীর গর্ভাশয়ের অবস্থা জানা সম্পর্কিত শাশ্বত জ্ঞান কোনভাবেই আল্লাহ ছাড়া কারো সাধ্যের মধ্যে নেই।
মুহাক্কিক মুফাসসিরীনে কিরাম আয়াতটির এরূপ মর্মই বর্ণনা করেছেন এবং আরোপিত প্রশ্নের উল্লিখিত জবাব দিয়েছেন, যা কুরআন ও হাদীসভিত্তিক এবং সম্পূর্ণ বাস্তব।
কিন্তু ডাক্তার জাকির নায়েক কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান না থাকায় এমন প্রশ্নে হতচকিত হয়ে পবিত্র কুরআনের আয়াতের অর্থকেই পাল্টে ফেলেছেন। অধিকন্তু নিজের মুর্খতাকে ধামাচাপা দিতে হাদীস শরীফে সাহাবায়ে কিরাম (রা.) হতে বর্ণিত এবং নির্ভরযোগ্য মুফাসসির তাবিয়ীগণের (র.) বর্ণনাকৃত অর্থকে ‘তারা ভুল বুঝেছেন’ বলে মন্তব্য করে চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন (নাউযুবিল্লাহ)।
লক্ষ্য করুন, ডাক্তার জাকির নায়েকের কনফারেন্সে “ইসলামের উপর ৪০টি অভিযোগ এবং তার প্রমাণভিত্তিক জবাব” শীর্ষক প্রশ্নসমূহের ২৭ প্রশ্নে অভিযোগ করে বলা হয় : “আল-কুরআনে বলা হয়েছে – মায়ের গর্ভে যে বাচ্চা তার সম্পর্কে শুধু আল্লাহই জানতে পারেন। কিন্তু আজ বিজ্ঞান যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেছে এবং আমরা সহজেই আলট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে বাচ্চার ছেলে-মেয়ে হওয়া সম্পর্কে জেনে ফেলছি। কুরআনের এ আয়াত কি চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিপন্থী নয়?”
এর উত্তরে ডাক্তার জাকির নায়েক বলেন :
“…কিছু লোক এটা বুঝেছেন যে, আল-কুরআন এ দাবী করে যে, আল্লাহ তা‘আলাই শুধু মায়ের উদরে যে সন্তান আছে, তার ছেলে বা মেয়ে হওয়া সম্পর্কে জানেন। আল-কুরআনের ৩১ নং সূরাহ লুকমানের ৩৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে : “অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলার কাছে কিয়ামতের আগমন জ্ঞান আছে। কোনো মানুষই বলতে পারে না – আগামীকাল সে কি অর্জন করবে এবং কোথায় মৃত্যুবরণ করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সবকিছু জানেন।”
আজ বিজ্ঞানের উন্নতি সাধিত হয়েছে এবং আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে মায়ের উদরের সন্তানের লিঙ্গ (নারী-পুরুষ) সম্পর্কে সহজে নির্ধারণ করা যাচ্ছে। এ কথা ঠিক যে, এ আয়াতের প্রচলিত ব্যাখ্যা ও অনুবাদের মধ্যে এ কথা বলা হয়েছে যে, শুধু আল্লাহই জানেন, মায়ের গর্ভে অবস্থিত বাচ্চা ছেলে না মেয়ে। কিন্তু আপনি এ আয়াতের আরবী মতন বিশ্লেষণ করে দেখতে পাবেন যে, ইংরেজী শব্দ Sex-এর কোনো আরবী শব্দ ব্যবহৃত হয় নি। মূলত কুরআনে যা বলেছে তা হলো, গর্ভে যা আছে তার জ্ঞান কেবল আল্লাহ তা‘আলারই আছে। অনেক তাফসীরকারকদের ভুল হয়েছে, তারা এর অর্থ এটা বুঝেছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা মাতৃগর্ভের বাচ্চার লিঙ্গ সম্পর্কে জানেন। এ কথা ঠিক নয়। এখানে লিঙ্গের দিকে ইঙ্গিত করা হয় নি। বরং ইঙ্গিত করা হয়েছে এদিকে যে, মাতৃজঠরের বাচ্চার প্রকৃতি কী হবে। সে কি স্বীয় পিতা-মাতার জন্য বরকত ও সৌভাগ্যের কারণ হবে, নাকি দুর্ভাগ্যের। সে কি সৎ হবে নাকি অসৎ, সে জান্নাতে যাবে না জাহান্নামে। এ সকল বক্তব্যের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর।”
(দ্রষ্টব্য : মাজমূ‘আহ খুতুবাত (উর্দূ), জিলদ১, পৃষ্ঠা নং ৩৪৭/ ডা. জাকির নায়েক লেকচার সমগ্র (বাংলা), ভলিয়াম নং ১, পৃষ্ঠা নং ২২৯)
এখানে ডাক্তার জাকির নায়েক তার বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করাতে গিয়ে আরবী ভাষা ও আরবী ব্যাকরণ সম্পর্কে মুর্খতার প্রমাণ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “উক্ত আয়াতে লিঙ্গ বুঝানোর মত কোন আরবী শব্দ ব্যবহৃত হয়নি।” অথচ আয়াতটিতে এ স্থলে শব্দ রয়েছে, যার অর্থ – “যা কিছু”। এটা লিঙ্গ সহ সবদিককেই শামিল করে। কেননা, এটা এমন সংযুক্ত-বিশেষ্য বা ইসমে মাওসূল () – যা ব্যাপক অর্থ পরিগ্রহ করে। আর সংযোজনী বাক্য বা সিলা ()-এর সাথে মিলে এখানে অর্থ হয় : “যা কিছু গর্ভাশয়সমূহে রয়েছে।” এক্ষেত্রে “মায়ের গর্ভে যা রয়েছে” কথাটি ব্যাপক অর্থ প্রকাশ করছে। এটা ছেলে বা মেয়ে হওয়াও বুঝায়, আবার ফর্সা বা কালো হওয়াও বুঝায়, তেমনি একটি সন্তান বা একাধিক জমজ সন্তানও বুঝাতে পারে অথবা তা সন্তান না হয়ে নিছক রক্তপিণ্ড বা গোশতখণ্ডের আকৃতিকেও বুঝাতে পারে। এসব বিবরণ হচ্ছে বিদ্যমান হাল হিসেবে। আবার ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য করে এটা সৎ সন্তান বা অসৎ সন্তান বুঝানোও অবান্তর নয়, কেননা, শব্দটির অর্থগত ব্যাপকতা সবকিছুকেই শামিল করতে পারে। কিন্তু একে শুধুমাত্র সৎসন্তান ও অসৎ সন্তান অর্থের সাথে সীমাবদ্ধ করা এবং একে লিঙ্গের দিকে ইঙ্গিত করা হয় নি বলা আরবী ভাষা সম্পর্কে চরম মুর্খতার বহিঃপ্রকাশ এবং আয়াতের অর্থকে বিকৃত করার শামিল। বিশেষ করে যখন হাদীস ও তাফসীরের কিতাবসমূহে বিশেষভাবে এ অর্থকে উল্লেখ করে মহান আল্লাহর অসীম কুদরতকে প্রকাশ করা হয়েছে, তখন একে “তারা ভুল বুঝেছেন” মন্তব্য করে হাদীস ও তাফসীরের কথাকে ফু মেরে উড়িয়ে দেয়া কতটুকু দ্বীনী খিয়ানত ও মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াস – তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
পাশ্চাত্যের সমানাধিকারের সমর্থনে কুরআনের আয়াতের অর্থ বিকৃতি করেছেন ডাক্তার জাকির নায়েক এবং ভূয়া রেফারেন্স পেশ করেছেন
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন :
“পুরুষরা নারীদের ওপর কর্তৃত্ববান; এ জন্য যে, আল্লাহ তাদের এককে অন্যের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের মাল-সম্পদ থেকে যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করে।”
(সূরাহ নিসা, আয়াত নং ৩৪)
এ আয়াতে নারীদের ওপর পুরুষদের কর্তৃত্বমূলক বিশেষ মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। আর তার দু’টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে : প্রথম কারণ, আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টিগতভাবে নারীদের তুলনায় পুরুষদেরকে পরিপূর্ণভাবে কতৃর্ত্বের উপযোগী শক্তি-সামর্থ, পরিচালনবৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা প্রদান করেছেন। নারীদের ওপর পুরুষদের এ প্রাধান্যের কারণে নবুওয়াত পুরুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়েছে। অনুরূপভাবে শরীয়তের নির্দেশ অনুসারে খলীফা তথা ইসলামী খিলাফতের রাষ্ট্রপ্রধান একমাত্র পুরুষই হতে পারে। এরূপভাবে বিচারপতি প্রভৃতি পদের জন্যও শুধু পুরুষরাই যোগ্য।
দ্বিতীয় কারণ হলো, পুরুষরা নারীদের তথা সংসারের যাবতীয় খরচাদি আনজাম দান করে, যা ইসলামী শরীয়ত তাদের প্রতি অর্পণ করেছে। যেমন, মহিলাদের মোহরের খরচ, খাওয়া-পরা, আবাসন এবং ব্যক্তিগত ও সাংসারিক অন্যান্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় খরচ পুরুষরা বহন করে থাকে। তাই নারীদেরকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করার কর্তৃত্ব পুরুষদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার।
আর পুরুষদের অভিভাবকত্বে থাকা নারীর জন্য মঙ্গলজনক। তা তাদের সম্ভ্রম রক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য কল্যাণকর। তেমনিভাবে এটা পারিবারিক সুষ্ঠু কাঠামো বিনির্মাণ ও সামাজিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যম।
আর অবশ্যই এতে নারীকে অবমূল্যায়ন করার চিন্তার অবকাশ নেই। কেননা, ইসলাম মায়ের পদতলে জান্নাত এবং পিতার তুলনায় মায়ের অধিকার তিনগুণ বেশী বলে ঘোষণা করে মাতৃকুলকে মহিমান্বিত করেছে। তেমনিভাবে কন্যাসন্তান লালন-পালনকে অধিক ফজীলতময় বর্ণনা করেছে এবং স্ত্রীদের প্রতি উত্তম আচরণের জন্য পুরুষদের প্রতি নির্দেশ প্রদান করে একে তাদের সাধুতা প্রমাণের মাপকাঠি নির্বাচন করেছে। আর উত্তরাধিকারসহ অর্জিত অর্থ-সম্পদে পুরুষদের ন্যায় নারীদের যৌক্তিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। এভাবে নারী ও পুরুষ যে যার ন্যায্য অধিকার ভোগ করে পৃথিবীতে শান্তির নীড় রচনা করবে। নারী ও পুরুষের এ ন্যায্য অধিকারই সার্বিকভাবে তাদের উভয়ের জন্য মঙ্গলজনক।
পক্ষান্তরে তথাকথিত পাশ্চাত্যের সমান অধিকার নারী ও পুরুষের জন্য কল্যাণকর নয়। সেই সমান অধিকার মানতে গেলে পুরুষের অনেক শক্তি ও সামর্থকে খর্ব করে ফেলা হয় এবং নারীকে অনেক কিছু হারাতে হয়Ñযা তার জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলবে। আর এর ফলে নানা বিপর্যয়কর অবস্থার সৃষ্টি হয়ে পারিবারিক ও সামাজিক অবকাঠামো ধ্বংসের মুখে পতিত হওয়া অবশ্যম্ভাবী। পাশ্চাত্যের বিধ্বস্ত নারীসমাজ ও তাদের বিপর্যস্ত পরিবারকাঠামোর করুণ চিত্র এর বড় প্রমাণ।
দুঃখজনক যে, বিধর্মীরা তাদের সেই বিপর্যয়কর পরিণতি মুসলমানদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে মুসলিম দেশসমূহে ইসলামবিরোধী সমানাধিকারের থিউরী পুশইন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এর মাধ্যমে তারা মুখরোচক বুলির আড়ালে মুসলিম সমাজ থেকে ইসলামী মূল্যবোধ ও শান্তিময় পরিবার ব্যবস্থা ধ্বংস করতে চায়। তাদের এ সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে তারা কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রে তাদের তল্পিবাহক তৈরী করেছেÑযারা তাদের প্ররোচনায় মাঝে-মধ্যেই সমানাধিকারের শ্লোগানে মুসলিম দেশের রাজপথ গরম করতে প্রয়াস চালায়।
দুঃখের বিষয়, ডাক্তার জাকির নায়েক তাদের দোসর হয়ে তথাকথিত সমানাধিকারের পক্ষে ওকালতীতে নেমেছেন। তিনি বিভিন্ন লেকচারে এর সমর্থনে কথা বলতে গিয়ে কুরআন ও হাদীসের বর্ণনাকে পর্যন্ত বিকৃত ও পরিবর্তন করে ফেলেছেন।
এ মর্মে ডাক্তার জাকির নায়েক বর্ণিত সূরাহ নিসার ৩৪ আয়াত উদ্ধৃত করতঃ এর ব্যাখ্যাকে বিকৃত করে বলেন, “লোকেরা বলেন, (কাওয়াম) অর্থ শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়ে এক স্তর ওপরে, কিন্তু বাস্তবে শব্দটি (ইকামত) শব্দমূল থেকে এসেছে। ইক্বামত অর্থ যেমন আপনি নামাযের পূর্বে ইক্বামাত দেন আপনি দাঁড়ান। সুতরাং ইকামাত অর্থ দাঁড়ানো। অতএব, ক্বাওয়াম শব্দের অর্থ দায়িত্বের দিক দিয়ে এক স্তর ওপরে, শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়ে নয়। এমনকি আপনারা যদি ইবনে কাছীরের তাফসীর পড়েন, তাহলে দেখতে পাবেন। তিনি বলেন, দায়িত্বের দিক দিয়ে এক স্তর ওপরে, শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়ে নয়। ….. এ কারণে যে, স্বামী-স্ত্রীর অধিকার সমান। ইসলামের এ ধরনের অধিকারকে আপনি আধুনিক বলবেন নাকি সেকেলে?”
(দ্রষ্টব্য : ডাঃ জাকির নায়েক লেকচার সমগ্র, ভলিয়াম নং ১, পৃষ্ঠা নং ৩৪৩)
ডাক্তার জাকির নায়েক এখানে সমানাধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে নারীর তুলনায় পুরুষের ইসলামপ্রদত্ত বিশেষ অধিকারকে অস্বীকার করেছেন। এটা সরাসরি কুরআন ও হাদীসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার শামিল। অথচ তিনি তা করেছেন ইসলামের নামে। এভাবে ইসলামকে বিকৃত করার মারাত্মক অপকর্মে তিনি লিপ্ত হয়েছেন।
তার ভিত্তি কেমন ঠুনকো যে, পবিত্র কুরআনের যে আয়াতের প্রেক্ষিত টেনে ডাক্তার জাকির নায়েক এ উক্তি করেছেন, উক্ত সূরাহ নিসার ৩৪ আয়াতের অর্থ তিনি নিজেই করেছেন এভাবে যে, “পুরুষরা নারীদের রক্ষক ও ব্যবস্থাপক। কেননা, আল্লাহ তাদের একজনকে অধিক মর্যাদা দান করেছেন অপরজন থেকে…।” (দ্রষ্টব্য : ডাঃ জাকির নায়েক লেকচার সমগ্র, ভলিয়াম নং ১, পৃষ্ঠা নং ৩৪৩) এখানে “আল্লাহ তাদের একজনকে অধিক মর্যাদা দান করেছেন অপরজন থেকে”-এটা কি নারীর ওপর পুরুষের বিশেষ মর্যাদার কথা বুঝাচ্ছে না? সুতরাং আবার সেই মর্যাদাকে অস্বীকার করে “পুরুষ শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়ে ওপরে নয়” বলা একদিকে স্ববিরোধিতা এবং অপরদিকে কুরআনের বর্ণনার স্পষ্ট বিরুদ্ধাচরণ বৈকি!
উক্ত আয়াত ছাড়াও নারীর ওপর পুরুষের বিশেষ অধিকার ও প্রাধান্যের কথা পবিত্র কুরআনের আরো বিভিন্ন স্থানে রয়েছে। যেমন, মহান আল্লাহ সূরাহ বাক্বারায় ইরশাদ করেন :
“পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের ওপর অধিকার রয়েছে, তেমনি স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের ওপর নিয়ম অনুযায়ী। আর নারীদের ওপর পুরুষদের বিশেষ শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে।”
(সূরাহ বাক্বারা, আয়াত নং ২২৮)
এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বিশিষ্ট তাফসীরবিদ সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, “আল্লাহ তা‘আলা পুরুষকে স্ত্রীলোকের তুলনায় বিশেষ উচ্চমর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য দান করেছেন।”
(তাফসীরে কুরতুবী/ তাফসীরে মা‘আরিফুল কুরআন, সৌদী সংস্করণ, ১২৪ পৃষ্ঠা)
এ আয়াতে নারীর ওপর পুরুষের শ্রেষ্ঠত্বের কথা স্পষ্টরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। আর এ শ্রেষ্ঠত্ব যে মর্যাদার শ্রেষ্ঠত্ব, শুধু দায়িত্বের শ্রেষ্ঠত্ব নয়- তা বলাই বাহুল্য। এ আয়াতের তাফসীরে তা সুবিদিত।
তেমনিভাবে হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ (সা.) স্ত্রীর ওপর স্বামীর মর্যাদার কথা বর্ণনা করে ইরশাদ করেন : “যদি আমি কাউকে আদেশ করতাম যে, কাউকে (সম্মান প্রদর্শনার্থে) সিজদা করবে, তাহলে আমি অবশ্যই মহিলাদেরকে আদেশ করতাম যে, তারা তাদের স্বামীদেরকে সিজদা করবে।” (সুনানে আবু দাউদ, ২য় খ-, ২৪৪ পৃষ্ঠা)
স্ত্রীর ওপর স্বামীর এ কর্তৃত্বমূলক মর্যাদার প্রেক্ষিতেই স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর ওপর ফরজ। মুসনাদে আহমদ হাদীসগ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : “মহিলা যখন পাঁচওয়াক্ত নামায পড়বে, রামাজানের রোযা রাখবে, স্বীয় গুপ্তাঙ্গের হিফাজত করবে এবং স্বামীর আনুগত্য করবে (তার কথা মেনে চলবে), তাহলে সে যে দরজা দিয়েই ইচ্ছে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
উল্লেখ্য, নারীর ওপর পুরুষের এ প্রাধান্য তথা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অভিভাবকত্ব মেনে চলার নির্দেশ দুনিয়ার ইনতিজামের সুষ্ঠুতা এবং নারীর ইজ্জত-আব্রুর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিধান প্রভৃতির জন্য প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু আখিরাতের ক্ষেত্রে তথা ঈমান ও আমলের ব্যাপারে নারী ও পুরুষের মাঝে কোন ব্যবধান নেই। এ জন্য কোন নারী ঈমান ও আমলের দিক দিয়ে কোন পুরুষ অপেক্ষা উচ্চস্থান লাভ করা অস্বাভাবিক নয়।
নারীর ওপর পুরুষের কর্তৃত্ব ও প্রাধান্যের পক্ষে কুরআন ও হাদীসের স্পষ্ট দলীল থাকা সত্ত্বেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে ডাক্তার জাকির নায়েক পাশ্চাত্যের সমানাধিকারের পক্ষ নিয়েছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে তিনি কোন দলীল-প্রমাণ দিতে পারেন নি। যা দিয়েছেন, তাকে ছলচাতুরীর আশ্রয় বলতে হয়। তিনি এক্ষেত্রে পবিত্র কুরআনের বর্ণিত আয়াতের শব্দের ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি এ শব্দটি শব্দমূল থেকে এসেছে বলে উল্লেখ করেছেন। এটা তার আরবী ভাষা ও ব্যাকরণ সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক। এ দুই শব্দের (শব্দস্তর) সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং অর্থও ভিন্ন। শব্দটি গুণবাচক কর্তৃবিশেষ্য, এর অর্থ : কর্তৃত্ববান, ক্ষমতাবান। এ শব্দটি নির্গত হয়েছে ক্রিয়া থেকে, যার ক্রিয়ামূল হচ্ছে । অর্থ : :দাঁড়ানো। অপরদিকে শব্দটি ক্রিয়াশব্দের ক্রিয়ামূল। অর্থ : দাঁড় করানো, কায়িম করা, প্রতিষ্ঠা করা। যেমন, নামায কায়িম করাকে ইক্বামাতে সালাত বলা হয়। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে : ইকামাত শব্দটি এক্ষেত্রে (লাযিম) নয়, বরং (মুতাআদ্দী); আর এর অর্থ : দাঁড়ানো নয়, বরং দাঁড় করানো। তাই কাওয়াম শব্দকে ইকামাত শব্দের সাথে গুলিয়ে দেয়া নিতান্ত গর্হিত কাজ,যা ডাক্তার জাকির নায়েক করেছেন।
তেমনিভাবে ডাক্তার জাকির নায়েক কুরআন ও হাদীসের খিলাফ পাশ্চাত্যের সমানাধিকার মতবাদকে সমর্থন করে তার পক্ষে তাফসীরে ইবনে কাছীরের যে উদ্ধৃতি দিয়েছেন, তা সম্পূর্ণ ভূয়া রেফারেন্স। এ পর্যায়ে ডাক্তার জাকির নায়েক যে বলেছেন, “আপনারা যদি ইবনে কাছীরের তাফসীর পড়েন, তাহলে দেখতে পাবেন। তিনি বলেন, দায়িত্বের দিক দিয়ে এক স্তর ওপরে, শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়ে নয়।” – এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা উদ্ধৃতি। তাফসীরে ইবনে কাছীরের কোথাও এ রকম কোন কথা নেই। বরং এর উল্টোটাই রয়েছে এবং নারীর ওপর পুরুষের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের বিভিন্ন দিক সেখানে আলোচনা করা হয়েছে। দেখুন, আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে ইবনে কাছীরের বর্ণনা :
“অর্থ হচ্ছে – পুরুষ নারীর ওপর কর্তৃত্ববান অর্থাৎ সে তার সরদার ও অভিভাবক, তার প্রতি হুকুমদাতা এবং তার বক্র চালচলনের ক্ষেত্রে শাসনকারী।”
(দ্রষ্টব্য : তাফসীর ইবনে কাছীর, ২য় খ-, ২৫৬ পৃষ্ঠা)
তেমনিভাবে আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে ইবনে কাছীরে বলা হয়েছে :
“অর্থাৎ নারীদের ওপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে মর্যাদায়, শারীরিক গঠনে, পজেশনে, শরয়ী হুকুম পালনে, খরচাদি নির্বাহে, যাবতীয় ব্যবস্থাপনায় এবং ইহকালীন ও পরকালীন বিভিন্ন বিষয়ে।”
(দ্রষ্টব্য : তাফসীর ইবনে কাছীর, ১ম খণ্ড, ৪৫৯ পৃষ্ঠা)
ডাক্তার জাকির নায়েক এখানে সুক্ষ্ম কারচুপি এবং মিথ্যা ও ভূয়া রেফারেন্সের গোঁজামিলের মাধ্যমে বিজাতিদের সমানাধিকার থিউরী মুসলমানদের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়ার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। এভাবে ডাক্তার জাকির নায়েক বহু ব্যাপারে মিথ্যা ও ভূয়া রেফারেন্সের আশ্রয় নিয়ে মুসলিম মিল্লাতের মধ্যে গোমরাহী ছড়িয়েছেন। (চলবে)
abulhasan_shamsabadi@yahoo.com
মূর্খ মোল্লারাই মানুষকে সন্দেহে ফেলে।এ ধরনের টালমাটাল ব্যাখ্যার কারনেই মানুষ নাস্তিক হয়।
ReplyDelete