Tuesday, June 17, 2014

মহাযুদ্ধ আসিতেছে এবং আমাদের করণীয়



ধেয়ে  আসা  মহাযুদ্ধ  এবং  আমাদের  কি  করা  উচিত
মুসলিম  যুব  সম্প্রদায়  অনেক  সময়  জিজ্ঞাসা  করে,  হে  শায়খ !  মোহময়  এই  রঙিন  দুনিয়ায়  আমরা  কেমন  করিয়া  জীবন  যাপন  করিব  যদি  আমরা  ইসলামের  অনুশাসন  মেনে  চলি ।  যেখানে  ওলামা-মাশায়েখগণ  সর্বদা  বলিতে  থাকেন,  সুদে  ঋণ  নিয়ে  বাড়ি  ক্রয়  করিবেন  না,  সুদে  ঋণ  নিয়ে  গাড়ি  ক্রয়  করিবেন  না,  সুদে  টাকা  নিয়ে  ব্যবসা  করবেন  না,  সুদে  কর্জ  নিয়ে  ভার্সিটির  পড়ার  খরচ  জোগাবেন  না ।  আমাদেরকে  তখন  মুসলিম  যুবকদের  নিকট  বিষয়টি  বিশদ  ব্যাখ্যা  করিয়া  বলিতে  হয় । এই  অবস্থা  হঠাৎ  কোন  দুর্ঘটনাক্রমে  ঘটিতেছে  না ।  নবীজি  (সাঃ)  এই  ব্যাপারে  ভবিষ্যৎবাণী  করিয়া  গিয়াছেন যে, এমন  একটা  সময়  আসিবে  যখন  সমগ্র  মানবজাতির  মধ্যে  একজন  লোকও  পাওয়া  যাইবে  না  যে  সুদ  খায়  না ।  যদি  কেউ  সরাসরি  সুদ  নাও  খায়  তখাপি  সুদের  ধুলাবালি  এবং  বাষ্প  তাহার  শরীরে  লাগিবেই ।  এটা  আখেরী  জামানা / শেষ  যুগ ।  আখেরী  জামানা  বিদ্যা  যাহা  শেষ  যুগের  ঘটনাপুঞ্জি  নিয়া  আলোচনা  করে ।  খ্রিষ্টানদেরও  আখেরী  জামানা  বিদ্যা  আছে ।  ইহুদীদেরও  শেষ  যামানা  বিদ্যা  আছে ।  আমাদের  মুসলমানদেরও  নিজস্ব  আখেরী  যামানা  বিদ্যা  আছে ।  এই  তিনটির  মধ্যে  কিছু  বিষয়  আছে  যাহা  সাদৃশ্যপূর্ণ ।  আর  তা  হইল  আমরা  বর্তমানে  একটি  মহাযুদ্ধের  দ্বারপ্রান্তে  দাঁড়িয়ে  আছি ।  আর  ইহা  হইবে  এমন  ভয়ানক  যুদ্ধ  যা  মানবজাতি  ইতিপূর্বে  কখনও  দেখে  নাই ।  খ্রীষ্টানরা  ইহাকে  বলে  আরমাগেডন ।  বিশ্বনবী (সাঃ)  ইহাকে  বলিয়াছেন  মালহামা / মহাযুদ্ধ / মাংসের  যুদ্ধ (ইহাতে  এতো  মানুষের  মৃত্যু  হইবে  যে,  মাঠের  পর  মাঠ  মানুষের  লাশে  পরিপূর্ণ  হইয়া  যাইবে / দূর  হইতে  মনে  হইবে  মাংসের  মাঠ) ।  মানবজাতির  অর্ধেকেরও  বেশী  এই  মালহামায়  মৃত্যুবরণ  করিবে ।  এই  মহাযুদ্ধ /  মালহামা  বর্তমান  বিশ্বের  শত্রুভাবাপন্ন  দুইটি  পরাশক্তির  মধ্যে  সংঘঠিত  হইবে ।  তাহার  একদিকে  আছে  ইয়াজুজ-মাজুজ  এংলো-অ্যামেরিকান-ইহুদী-খ্রীষ্টানদের  যায়োনিষ্ট  জোট / ন্যাটো  হইল  তাদের  সামরিক  শাখা,  যাহা  রাশিয়াকে  (রুম)  দমন  করার  চেষ্টায়  লিপ্ত  আছে ।  যখন  বলশেভিক  বিপ্লব  সংগঠিত  হয়,  রাশিয়াকে  তখন  কমিউনিজমের  মাধ্যমে  সোভিয়েত  ইউনিয়নে  বন্দি  করিয়া  রাখা  হয় ।
কাজেই  বলা  যায়  ইয়াজুজ  মাজুজরা  রাশিয়াকে  নিয়ন্ত্রণ  করিত  যাহা  হইল  (হাদীসে  বর্ণিত)  রুম ।  তারপর  যখন  সোভিয়েত  ইউনিয়নের  পতন  ঘটানো  হইল  তখন  ইউক্রেইন  স্বাধীন  দেশ  হিসাবে  আত্মপ্রকাশ  করিল ।  যাতে  ইউক্রেইন  ন্যাটোর  সামরিক  জোটে  যোগ  দিতে  পারে ।  তারপর  ইউক্রে্ইনে  পাশ্চাত্যপন্থী  সরকার  ক্ষমতায়  আসিল  এবং  ইউক্রেইন  ন্যাটোর  সদস্য  হইল ।  যেহেতু  সোভিয়েত  ইউনিয়ন  রাশিয়ান  ভূখন্ড  ক্রিমিয়াকে  ইউক্রেইনকে  দিয়াছিল,  তাই  ইউক্রেইন  ন্যাটোর  সদস্য  হওয়ায়  রাশিয়া  ক্রিমিয়াকে  দখল  করিয়া  নিল ।  ইউক্রেইন  ক্রিমিয়াকে  দখল  করিয়া  রাখার  মাধ্যমে  রাশিয়াকে  কৃষ্ণসাগরে  প্রবেশ  করিতে  দিবে  না । ফলে  রাশিয়াও  ইয়াজুজ-মাজুজের  নিয়ন্ত্রণে  থাকিবে,  ইহা  ছিল  জায়োনিষ্টদের  মহাপরিকল্পনা । এমন  একটা  সময়  ছিল  যখন  রাশিয়াও  জায়োনিষ্টদের  নিয়ন্ত্রণে  ছিল ।  কিন্তু  তারপর  সোভিয়েত  ইউনিয়নের  পতনের  পর  রাশিয়া  বর্তমানে  তার  অর্থোডক্স  ক্রিশ্চিয়ান  ধর্মে  ফিরিয়া  আসিয়াছে (হাদীসে  যাহাকে  রুম  বলা  হইয়াছে) ।  বিবাদমান  ইহুদীবাদী  জোট  ন্যাটোর  পারমাণবিক  অস্ত্র  আছে  আবার  রাশিয়া  এবং  তার  জোটেরও  পারমাণবিক  অস্ত্র  আছে ।  কাজেই  মহাযুদ্ধ  আসিতেছে ।  কারণ  তারা  ক্রিমিয়ার  হাতছাড়া  হওয়া  মানিয়া  নিতে  পারে  নাই ।  ইহা  ছিল  জায়োনিষ্টদের  জন্য  সবচেয়ে  অপমানজনক  পরাজয় ।  ইউক্রেইনে  রাশিয়া  বিজয়ী  হইয়াছে ।  কাজেই  নিশ্চিতভাবে  আমরা  মালহামা / মহাযুদ্ধের  দ্বারপ্রান্তে  দাঁড়িয়ে  আছি,  যেই  সম্পর্কে  মহানবী (সাঃ)  সুস্পষ্টভাবে  ভবিষ্যৎবাণী  করিয়া  গিয়াছেন ।  ইহা  হইল  আখেরী  যামানা  সংক্রান্ত  জ্ঞান ।  সেই  বিশ্বযুদ্ধ  যখন  শুরু  হইবে,  তাহাতে  হাজারে  হাজারে  এটম  বোমা  নিক্ষিপ্ত  হইবে ।  মানবজাতির  অর্ধেকেরও  বেশী  তাহাতে  মারা  যাইবে ।  কিন্তু  ইহা  কোন  দুর্ঘটনাক্রমে  হইবে  না ।  কেননা  আল্লাহ  বলিয়াছেন,  আমি  তোমাদের  বিরুদ্ধে  যুদ্ধ  ঘোষণা  করিলাম  যদি  তোমরা  সুদ  লেনদেন  ত্যাগ  না  করো ।  আমরা  সুদের  উপর  প্রতিষ্টিত  একটি  জগতে  বসবাস  করিতেছি ।  আর  এই  ব্যাপারে  কারো  কোন  মাথাব্যথা  আছে  বলিয়া  মনে  হয়  না ।  আপনি  রাতের  খাবারে  বিরিয়ানী  খেয়েছেন….এবার  বাড়ি  ফিরিয়া  যান……..তারপর  আয়েশ  করিয়া  ঘুমান……আল্লাহর  আইনকে  কে  তোয়াক্কা  করে ?  আল্লাহর  বিধানকে  কে  পরোয়া  করে  যিনি  সুদকে  নিষিদ্ধ  করিয়াছেন ?  আল্লাহ  কোরআনে  আমাদেরকে  সতর্ক  করিয়াছেন,  অবাধ্যতার  জন্য  তিনি  আমাদের  সবাইকে  ধ্বংস  করিতে  পারেন ।  সুরা  বনিইসরাইলে  বলিয়াছেন,  খোদাদ্রোহীতার  জন্য  তাদের  সকলকে  ধ্বংস  করা  হইবে,  সকল  শহর-নগর । আর  যাদেরকে  ধ্বংস  করা  হইবে  না,  তাদেরকে  দেওয়া  হইবে  ভয়াবহ  ‍শাস্তি । পবিত্র  কোরআনে  এমনই  বলা  হইয়াছে ।  সুতরাং  মানবজাতির  অধিকাংশই  মৃত্যুবরণ  করিবে ।  আর  তাহারা  মরিবার  উপযুক্ত,  হ্যাঁ । 
কাজেই  মুসলিম  তরুণ  যুবকরা  জানতে  চায়,  হে  শায়খ !  আমাদের  কি  করা  উচিত ?  উত্তর,  তোমরা  ভাগ্যবান  যে  তোমরা  তরুন  যুবক ।  কেননা  মহান  আল্লাহ  পবিত্র  কোরআনে  যুবকদের  জন্য  স্বতন্ত্র  একটি  সুরা  নাজিল  করিয়াছেন,  সুরা  কাহফ ।  আর  ছুরা  কাহাফে  কয়েক  জন  যুবকের  কথা  বলা  হইয়াছে,  যাহারা  নাস্তিক  খোদাদ্রোহী  সমাজের  সুযোগ  সুবিধা  গ্রহন  করে  নাই,  হারাম  বিলাসিতায়  গা  ভাসিয়ে  দেয়  নাই ।  বরং  সাহস  নিয়ে,  স্টিলের  মতো  শক্ত  মেরুদন্ড  নিয়ে  কুফরিপূর্ণ  সমাজের  বিরুদ্ধে,  দাজ্জালী  সভ্যতার  বিরুদ্ধে  দাঁড়িয়েছে ।  কিন্তু  যখন  কুফরি  সমাজ  রাষ্ট্র  তাদের  বিরুদ্ধে  আক্রমণ  চালিয়েছে,  তখন  তারা  ভীত  হইয়া  খোদাদ্রোহী  শক্তির  সাথে  আপোষ  করে  নাই ।  বরং  নিজেদের  চাকরি  ছাড়িয়াছে,  বাড়ি  ছাড়িয়াছে,  পরিবার  ছাড়িয়াছে,  ধন-সম্পদ  ছাড়িয়াছে,  তাদের  সবকিছু  ছাড়িয়াছে  কিন্তু  তারপরও  ইসলামকে  ছাড়ে  নাই ।  ঈমান  রক্ষার্থে  তাহারা  দূরবর্তী  এক  পাহাড়ের  গুহায়  গিয়া  আশ্রয়  নিয়াছে ।  তারপরও  তাহারা  আল্লাহর  নিষিদ্ধ  কাজে  লিপ্ত  হইতে  রাজী  হয়  নাই ।  এমন  সাহস  কেবল  একজন  যুবকের  পক্ষেই  দেখানো  সম্ভব ।  মোহময়  এই  কুফরি  দাজ্জালী  সমাজ  ব্যবস্থাকে  মোকাবেলায়  তোমাদের  সামনে  তিনটি  অপশান  আছে ।  প্রথমত  ‍বৃহত্তর  পরিসরে  ইসলামকে  ফিরাইয়া  আনা । এই  জন্য  আমাদেরকে  ব্যাংকগুলি  বন্ধ  করিতে  হইতে,  প্রতারণামূলক  কাগজের  মুদ্রা  লেনদেন  বন্ধ  করিতে  হইবে,  কোরআন-সুন্নাহ  সম্মত  স্বর্ণমুদ্রা-রৌপ্যমুদ্রা  ফিরিয়ে  আনিতে  হইবে ।  ইহা  হইল  প্রথম  অপশান ।  কিন্তু  আলেমদেরকে  সহযোগিতা  ছাড়া  তাহা  করা  সম্ভব  না ।  তুমি  কি  এমন  একজন  আলেমকে  দেখিয়াছো  যে  (সুদভিত্তিক  এবং  তথাকথিত  ইসলামী ??)  ব্যাংকিং  সিষ্টেম  বন্ধ  করিতে  চায় ?  তুমি  কি  এমন  কোন  আলেম  দেখিয়াছ  যে  ভুয়া  প্রতারণামূলক  কাগজের  মুদ্রা  বন্ধ  করিতে  চায়  এবং  কোরআন-সুন্নাহ  ভিত্তিক  দিনার-দিরহাম  চালূ  করিতে  চায় ?  এমন  একজন  ওলামার  পরিচয়  কি  তোমার  কাছে  আছে  ?  মাত্র  একজন  ??  তাহলে  এই  অবস্থায়  তুমি  কিভাবে  বৃহত্তর  সামাজিক-রাষ্ট্রীয়  পরিসরে  ইসলাম  কায়েম  করিবে ?  কাজেই  এক্ষেত্রে  আমাদের  দ্বিতীয়  অপশান  হইল  ক্ষুদ্রতর  পরিসরে  ইসলাম  কায়েম  করার  চেষ্টা  করা ।  আর  তাহা  হইল  আসহাবে  কাহাফের  মতো  খোদাদ্রোহী  দাজ্জালের  সমাজ  ব্যবস্থা  হইতে  নিজেকে  আলাদা  করিয়া  নেওয়া ।  তুমি  দূরবর্তী  প্রত্যন্ত  কোন  অঞ্চলে  একটি  গ্রাম  প্রতিষ্টা  কর ।  তারপর  সেখানে  একটি  বাজার  প্রতিষ্টা  কর ।  যেখানে  লেনদেন  হইবে  কোরআন-সুন্নাহ  ভিত্তিক  হালাল  মুদ্রার  মাধ্যমে (স্বর্ণমুদ্রা-রৌপ্যমুদ্রা) ।  তারপর  সেখানে  একটি  মসজিদ  প্রতিষ্টা  কর ।  যেখানে  ভুয়া  প্রতারণামূলক  টাকা-রুপি-ডলার-রিয়াল  ইত্যাদি  হারাম  মুদ্রা  ব্যবহৃত  হইবে  না ।
-আল্লামা ইমরান নযর হোসেন
মালেশিয়ায়  ধারনকৃত  আসন্ন  মহাযুদ্ধ  এবং  আমাদের  করণীয়” লেকচার  থেকে  নেয়া ।
অনুবাদ: ডাঃ  বশীর  মাহমুদ  ইলিয়াস

No comments:

Post a Comment