হযরত
মুহাম্মদ
(সা.)
শান
ও
মর্যাদা
সংকলনে : রূহুল আমীন খান
আল কোরআন
মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নন বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী। (সুরা আহযাব, ৩৩ : ৪০)
তোমাদের কাছে এসেছেন তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের হিতাকাক্সক্ষী, ঈমানদারদের প্রতি হচ্ছেন ¯েœহপরায়ণ ও পরম দয়ালু। (সুরা তাওবা : ১২৮, ১২৯)
হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষ্য প্রদানকারী, সুসংবাদ দানকারী, গাফিলদের সতর্ককারী ও আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁরই দিকে আহ্বানকারী এবং উজ্জ্বল জ্যোতিষ্করূপে প্রেরণ করেছি। (সূরা আহযাব; (৪৫ : ৪৬)
তোমাদের নিকট এসেছে এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা (মুহম্মদ স:) এবং একটি সমুজ্জ্বল কিতাব (আল-কুরআন) [সূরা মায়িদা : ১৫]
তিনি [মুহাম্মদ (স.)] কখনো নিজের থেকে কোনো কথা বলেন না। বরং তা হচ্ছে ওহী, যা তাঁর নিকট পাঠানো হয়। (নাজম: ৩, ৪)
(হে নবী!) যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করে তারা আপনার নিকট এলে এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে এবং আপনিও তাদের জন্য ক্ষমা চাইলে তারা অবশ্যই আল্লাকে পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালুরূপে পাবে। (নিসা : ৬৪)
স্মরণ করুন, যখন আল্লাহ নবীদের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত যা কিছু দিয়েছি-এর পর তোমাদের কাছে যা আছে তার সমর্থকরূপে যখন একজন রাসূল আসবেন তখন নিশ্চয়ই তোমরা তাঁর প্রতি ঈমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে। তিনি বললেন, তোমরা কি স্বীকার করলে? এবং এ সম্পর্কে আমার অঙ্গীকার কি তোমরা গ্রহণ করলে? তারা বলল, আমরা স্বীকার করলাম। তিনি বললেন, তবে তোমরা সাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সাক্ষী রইলাম (আলে ইমরান : ৩ : ৮১)।
বলুন (হে রাসূল) তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (আলে ইমরান, ৩ : ৩১)।
কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্যপথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় সে দিকেই তাকে ফিরিয়ে দিব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব। আর তা কতই না মন্দনিবাস। (নিসা ৪ : ১১৫)
বলুন, আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর, এরপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তবে তার ওপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য সেই দায়ী এবং তোমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী এবং তার আনুগত্য করলে সৎপথ পাবে; রাসূলের কাজ তো কেবল স্পষ্টভাবে পৌঁছিয়ে দেওয়া।
(নূর, ২৪ : ৫৪)।
নবী (স:) মুমিনগণের নিকট তাদের নিজ নিজ জীবন হতে প্রিয় এবং তাঁর স্ত্রীগণ মুমিনগণের মা। (আহযাব, ৩৩ : ৬)
হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের উপরে তোমাদের কণ্ঠস্বরকে উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উঁচু স্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বলো না। এতে তোমাদের আমল (নেক কাজসমূহ) নিষ্ফল বরবাদ হয়ে যাবে তোমরা টেরও পাবে না। (হুজুরাত, ৪৯ : ২)
(হে নবী) আমি আপনাকে বিশ্বজগতের জন্য একমাত্র রহমত বানিয়ে পাঠিয়েছি। (আম্বিয়া, ১০৭)
(হে নবী) আমি তো আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সু-সংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। (সাবা, ৩৪ : ২৮)
আমিতো আপনার নিকট সত্যসহ কিতাব-অবতীর্ণ করেছি যাতে আপনি আল্লাহ আপনাকে যা জানিয়েছেন সে অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার মীমাংসা করেন। (নিসা, ৪ : ১০৫)
না, আমি আপনার মালিকের শপথ করে বলছি, এরা কিছুতেই ঈমানদার হতে পারবে না যতোক্ষণ না তারা তাদের যাবতীয় মতবিরোধের মীমাংসায় আপনাকে (শর্তহীনভাবে) মেনে নেবে, অতঃপর আপনি যা ফয়সালা করবেন সে ব্যাপারে তাদের মনে আর কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে না, বরং আপনার সিদ্ধান্ত তারা সর্বান্তকরণে মেনে নেবে। (নিসা, ৪ : ৬৫)
(হে নবী) নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত (কলম, ৬৮ : ৪)
কেউ রাসূলের আনুগত্য করলে সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল। (নিসা, ৪ : ৮০)
কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্যপথ অনুসরণ করে তবে যেদিক থেকে সে ফিরে যায় সে দিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব। আর তা কতই না মন্দ আবাসস্থল। (নিসা, ৪ : ১১৫)
আল্লাহর রাসূল তোমাদের যা কিছু অনুমতি দেন তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা কিছু নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকো। হাশর, ৫৯ : ৭
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর ওপর দরুদ পাঠান : অতএব হে ঈমানদারগণ তোমরাও নবীর ওপরে দরুদ পাঠাতে থাকো এবং তাঁকে উত্তমরূপে সালাম জানাও। (আহযাব, ৩৩ : ৫৬)
আল-হাদীস
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : জেনে রেখো, আমি আল্লাহতালার পরম বন্ধু-হাবীব, এতে আমার কোনো অহংকার নেই। আমি কিয়ামতের দিন লিওয়ায়ে হামদ-খোদায়ী প্রশংসার ঝা-াবাহক হব এবং তার নিচে আদম (আ:) ও তার পরবর্তী সকল আদম সন্তানরা থাকবে-এতে আমার কোনো অহংকার নেই। কিয়ামতের দিন আমিই সর্বাগ্রে শাফায়াতকারী হব এবং আমার সুপারিশ সর্বাগ্রে মঞ্জুর করা হবে, এতে আমার কোনো অহংকার নেই। আমিই সবার আগে বেহেশতের দরওয়াজার কড়া নাড়ব, আমার জন্যই সর্বপ্রথম বেহেশতের দরওয়াজা খোলা হবে এবং আল্লাহ পাক আমাকেই সর্বাগ্রে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন তখন আমার সঙ্গে গরীব মুমিন বান্দাগণ থাকবে-এতে আমার কোনো অহংকার নেই এবং আমি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের চেয়ে অধিক সম্মানিত-এতে আমার কোনো অহংকার নেই। (তিরমিযী)।
নবী করীম (সা:) বলেন, আমি কিয়ামতের দিন সকল মানুষের নেতা হব। (মুসলিম)
আবু হুরাইরা (রা:) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর চেয়ে অধিক সুন্দর আর কিছুই দেখিনি। তাঁর চেহারা মোবারকে ছিল চলমান সূর্যের ঔজ্জ্বল্য। (তিরমিযী)
আয়শা (রা:) বলেন, একদিন শেষরাতে আমি সেলাইর কাজ করছিলাম, হঠাৎ আমার হাত থেকে সুচটি পড়ে গেল। আমি আর তা খুঁজে পেলাম না এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সা:) আমার ঘরে প্রবেশ করলেন, তার চেহারা থেকে বিচ্ছুরিত উজ্জ্বল্যে আমি সুচটি পেয়ে গেলাম। আমি নবীজীকে এ খবরটি বললাম। এতে প্রিয় নবী (সা:) বললেন :
হে হোমায়রা! হযরত আয়েশা (রা.)-এর অপর নাম বড়ই পরিতাপ, বড়ই পরিতাপ, বড়ই পরিতাপ তাদের জন্য, যারা মোহব্বতের দৃষ্টিতে আমার চেহারার প্রতি তাকিয়ে দেখল না।
(দুররুল মুনাজ্জাম)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমাদের কারোর নিকট তার পিতামাতা, সন্তান-সন্ততি এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন থেকে অধিক প্রিয় না হব ততক্ষণ পর্যন্ত সে মুমিন হতে পারবে না। (বুখারী)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হযরত আদম (আ.) এর সত্তা যখন পানি ও মাটির মধ্যে বিদ্যমান তখনও আমি নবী ছিলাম। (তিরমিযী)
আল্লাহর হাবীব (সা.) বলেন, সেই সত্তার কসম যার অধিকারে রয়েছে আমার জীবন, এ সময়ে যদি তোমাদের নিকট হযরত মূসা (আ.) আগমন করতেন আর তোমরা আমাকে ছেড়ে তাঁর অনুসরণ করতে তা হলেও তোমরা মুক্তির পথ হারিয়ে গোমরা হয়ে যেতে। এমনকি তিনি যদি এ সময়ে জীবিত থাকতেন আর আমার নবুওয়াতের যমানা পেতেন তাহলে তিনিও নিশ্চয়ই আমার অনুসরণ করতেন। (দারেমী, মিশকাত)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আদম (আ.) যখন ভুল করে বসলেন তখন তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ মুহাম্মদ (সা.)-এর উসিলায় আমাকে ক্ষমা করুন। আল্লাহ বললেন : মুহাম্মদ (সা.)-কে তুমি কেমনে চিনলে? আদম বললেন : আপনি যখন আমার দেহকে তৈরি করে তাতে আমার রূহ প্রবেশ করালেন তখন আমি মাথা উঠিয়ে আরশের পায়ায় লিখা দেখলাম “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ তখন আমি বুঝলাম, আপনার সৃষ্টির মধ্যে আপনার সর্বাধিক প্রিয় বন্ধু ছাড়া অন্য কারো নাম আপনি আপনার নামের সঙ্গে যোগ করেননি। আল্লাহ বললেন : হে আদম! তুমি ঠিকই বলেছ। মুহাম্মদ (সা.)-কে সৃষ্টির উদ্দেশ্য যদি আমার না থাকত তবে আমি তোমাকেও সৃষ্টি করতাম না (হাকেম)
বিদায় হজের ভাষণে প্রিয় নবী (সা.) বলেন : “আমি তোমাদের মাঝে দু’টি প্রকাশ্য ও স্পষ্ট জিনিস রেখে যাচ্ছি। যদি তোমরা তা আঁকড়ে ধরে থাকো তাহলে কখনো তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাত।
একের অপরাধে অপরকে শাস্তি দেয়া চলবে না। অতঃপর পিতার অপরাধে পুত্রকে এবং পুত্রের অপরাধে পিতাকে দায়ী করা চলবে না।
নিশ্চয়ই এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সকল মুসলমানকে নিয়ে এক অবিচ্ছেদ্য ভ্রাতৃসমাজ।
আইয়্যামে জাহেলিয়াতের সকল কুসংস্কার, সকল অন্ধবিশ্বাস এবং সকল প্রকার অনাচার আজ আমার চরণতলে দলিত মথিত করলাম।
“নারীদের সম্পর্কে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তাদের সাথে উত্তম আচরণ করো।” (আল হাদীস)
প্রিয় নবী (সা.) বলেন : তোমাদের ব্যাপারে আমি দারিদ্র্যের আশঙ্কা করি না। আমারতো আশঙ্কা যে, না জানি দুনিয়া তোমাদেরকে পেয়ে বসে, যেরূপ তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের পেয়ে বসেছিল। ফলে তাদের মতো তোমরাও দুনিয়াতে আসক্ত হয়ে পড়বে ও তার জন্য কাক্সিক্ষত হবে। আর দুনিয়া তাদেরকে যেভাবে ধ্বংস করেছিল তোমাদেরকেও তদ্রƒপ ধ্বংস করে দেবে। (বুখারী ও মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন : আমার সকল উম্মতই বেহেশতে প্রবেশ করবে, ‘আবার’ দল ছাড়া। জিজ্ঞাসা করা হলো কারাসে ‘আবার’ দল? নবীজী বললেন, যে আমার তাবেদারি করল সে বেহেশতে প্রবেশ করল, আর যে আমার না ফরমানি করল সেই আবা’বা অগ্রাহ্যকারী (বুখারি)
মনীষীদের দৃষ্টিতে
ইমাম আজম আবু হানিফা (রহ.) তাঁর কাসীদায় লিখেন :
খোদার কসম, হে ইয়াসীন
সত্যি তুমি উপমাবিহীন।
ওগো প্রিয় আল্লার রাসূল
তোমার শিক্ষার মাঝে নাই কোথা বিন্দুমাত্র ভুল।
তুমি অনুপম
তব রূপ, তব গুণ বর্ণনায় অধম অক্ষম।
দার্শনিক কবি আল্লামা ইকবাল (রহ.) লিখেন :
প্রতিটি মুমিনের হৃদয়কেই তার প্রকৃত মাহবুব হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)-এর ভক্তি শ্রদ্ধার, প্রীতি-ভালবাসার সর্বোচ্চ স্থান দখল করে আছেন। কারণ, তিনিই যে মুমিনের প্রকৃত সম্পদ এবং মাহবুব, তারই প্রেম মাধুরী মুমিনের অন্তরে শক্তি ও সাহস যোগায়, জীবনী শক্তিহীন আত্মায় নব চেতনার সঞ্চার করে। মানুষ যখন আত্মমর্যাদা ও আত্মপরিচয় বিস্মৃত হয়ে অধপতনের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছিল, মানবতার এমনই এক দুর্দিনে বিশ্বমানবের প্রকৃত সুহৃদ ও কল্যাণকামী ত্রাণকর্তা, মুক্তিদাতা হযরত মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (সা.) মুক্তির জিয়নকাঠি নিয়ে আবির্ভূত হন। আত্মভোলা মানুষকে তিনি আত্মোপলব্ধির আহ্বান জানান। পথহারা মানুষকে তিনি দান করেন সঠিক পথের সন্ধান। তার প্রদর্শিত পথের পথিক হয়েই মুমিন আত্মপরিচয় লাভে ধন্য হয়েছে, পেয়েছে মুক্তিপথের সন্ধান। তাই তার অন্তরে এই মহামানবের প্রতি এত শ্রদ্ধা, ভক্তি ও প্রেম সুধার অন্তহীন ফল্গুধারা সদা প্রবাহিত। দুনিয়ার যে কোন ব্যক্তি ও বস্তুর তুলনায় তারই প্রতি মুমিনের সর্বাধিক হার্দ্য আকর্ষণ। কারণ তারই বদৌলতে মুমিন তার হারানো সম্পদ ফিরে পেয়েছে, শ্রষ্টা থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে তার সান্নিধ্য লাভের পথ খুঁজে পেয়েছে। চরম অবহেলিত লাঞ্ছিত ও অপমানিত জিন্দেগীর গ্লানী মুক্ত হয়ে উন্নত ও মর্যাদাপূর্ণ জিন্দেগীর আস্বাদ ফিরে পেয়েছে। জগতের বুকে নিজেদের জন্যে এক মর্যাদাপূর্ণ আসন নির্ণয় করে নিতে সক্ষম হয়েছে। শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও চারিত্রিক দিক থেকে একটি উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করে নেয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছে। আর এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)-এর বদৌলতে। কারণ তিনিই বিশ্ববাসীকে এক উন্নত জীবন বিধান, এক উন্নত রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও উন্নত সভ্যতা উপহার দিয়েছেন। মুসলিমগণ এই সম্পদে সম্পদশালী হয়েই গৌরব মর্যাদার আসনে সমাসীন হয়েছে। কাজেই মুসলিম মিল্লাতের সকল প্রকার গৌরব ও মর্যাদার উৎসই হচ্ছেন নবী মুস্তফা (সা.)।
(সীরাতুন্নবী স্মারক, ১৪১৯ হি:)।
সংকলনে : রূহুল আমীন খান
আল কোরআন
মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নন বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী। (সুরা আহযাব, ৩৩ : ৪০)
তোমাদের কাছে এসেছেন তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের হিতাকাক্সক্ষী, ঈমানদারদের প্রতি হচ্ছেন ¯েœহপরায়ণ ও পরম দয়ালু। (সুরা তাওবা : ১২৮, ১২৯)
হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষ্য প্রদানকারী, সুসংবাদ দানকারী, গাফিলদের সতর্ককারী ও আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁরই দিকে আহ্বানকারী এবং উজ্জ্বল জ্যোতিষ্করূপে প্রেরণ করেছি। (সূরা আহযাব; (৪৫ : ৪৬)
তোমাদের নিকট এসেছে এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা (মুহম্মদ স:) এবং একটি সমুজ্জ্বল কিতাব (আল-কুরআন) [সূরা মায়িদা : ১৫]
তিনি [মুহাম্মদ (স.)] কখনো নিজের থেকে কোনো কথা বলেন না। বরং তা হচ্ছে ওহী, যা তাঁর নিকট পাঠানো হয়। (নাজম: ৩, ৪)
(হে নবী!) যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করে তারা আপনার নিকট এলে এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে এবং আপনিও তাদের জন্য ক্ষমা চাইলে তারা অবশ্যই আল্লাকে পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালুরূপে পাবে। (নিসা : ৬৪)
স্মরণ করুন, যখন আল্লাহ নবীদের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত যা কিছু দিয়েছি-এর পর তোমাদের কাছে যা আছে তার সমর্থকরূপে যখন একজন রাসূল আসবেন তখন নিশ্চয়ই তোমরা তাঁর প্রতি ঈমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে। তিনি বললেন, তোমরা কি স্বীকার করলে? এবং এ সম্পর্কে আমার অঙ্গীকার কি তোমরা গ্রহণ করলে? তারা বলল, আমরা স্বীকার করলাম। তিনি বললেন, তবে তোমরা সাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সাক্ষী রইলাম (আলে ইমরান : ৩ : ৮১)।
বলুন (হে রাসূল) তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (আলে ইমরান, ৩ : ৩১)।
কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্যপথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় সে দিকেই তাকে ফিরিয়ে দিব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব। আর তা কতই না মন্দনিবাস। (নিসা ৪ : ১১৫)
বলুন, আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর, এরপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তবে তার ওপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য সেই দায়ী এবং তোমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী এবং তার আনুগত্য করলে সৎপথ পাবে; রাসূলের কাজ তো কেবল স্পষ্টভাবে পৌঁছিয়ে দেওয়া।
(নূর, ২৪ : ৫৪)।
নবী (স:) মুমিনগণের নিকট তাদের নিজ নিজ জীবন হতে প্রিয় এবং তাঁর স্ত্রীগণ মুমিনগণের মা। (আহযাব, ৩৩ : ৬)
হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের উপরে তোমাদের কণ্ঠস্বরকে উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উঁচু স্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বলো না। এতে তোমাদের আমল (নেক কাজসমূহ) নিষ্ফল বরবাদ হয়ে যাবে তোমরা টেরও পাবে না। (হুজুরাত, ৪৯ : ২)
(হে নবী) আমি আপনাকে বিশ্বজগতের জন্য একমাত্র রহমত বানিয়ে পাঠিয়েছি। (আম্বিয়া, ১০৭)
(হে নবী) আমি তো আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সু-সংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। (সাবা, ৩৪ : ২৮)
আমিতো আপনার নিকট সত্যসহ কিতাব-অবতীর্ণ করেছি যাতে আপনি আল্লাহ আপনাকে যা জানিয়েছেন সে অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার মীমাংসা করেন। (নিসা, ৪ : ১০৫)
না, আমি আপনার মালিকের শপথ করে বলছি, এরা কিছুতেই ঈমানদার হতে পারবে না যতোক্ষণ না তারা তাদের যাবতীয় মতবিরোধের মীমাংসায় আপনাকে (শর্তহীনভাবে) মেনে নেবে, অতঃপর আপনি যা ফয়সালা করবেন সে ব্যাপারে তাদের মনে আর কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে না, বরং আপনার সিদ্ধান্ত তারা সর্বান্তকরণে মেনে নেবে। (নিসা, ৪ : ৬৫)
(হে নবী) নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত (কলম, ৬৮ : ৪)
কেউ রাসূলের আনুগত্য করলে সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল। (নিসা, ৪ : ৮০)
কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্যপথ অনুসরণ করে তবে যেদিক থেকে সে ফিরে যায় সে দিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব। আর তা কতই না মন্দ আবাসস্থল। (নিসা, ৪ : ১১৫)
আল্লাহর রাসূল তোমাদের যা কিছু অনুমতি দেন তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা কিছু নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকো। হাশর, ৫৯ : ৭
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর ওপর দরুদ পাঠান : অতএব হে ঈমানদারগণ তোমরাও নবীর ওপরে দরুদ পাঠাতে থাকো এবং তাঁকে উত্তমরূপে সালাম জানাও। (আহযাব, ৩৩ : ৫৬)
আল-হাদীস
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : জেনে রেখো, আমি আল্লাহতালার পরম বন্ধু-হাবীব, এতে আমার কোনো অহংকার নেই। আমি কিয়ামতের দিন লিওয়ায়ে হামদ-খোদায়ী প্রশংসার ঝা-াবাহক হব এবং তার নিচে আদম (আ:) ও তার পরবর্তী সকল আদম সন্তানরা থাকবে-এতে আমার কোনো অহংকার নেই। কিয়ামতের দিন আমিই সর্বাগ্রে শাফায়াতকারী হব এবং আমার সুপারিশ সর্বাগ্রে মঞ্জুর করা হবে, এতে আমার কোনো অহংকার নেই। আমিই সবার আগে বেহেশতের দরওয়াজার কড়া নাড়ব, আমার জন্যই সর্বপ্রথম বেহেশতের দরওয়াজা খোলা হবে এবং আল্লাহ পাক আমাকেই সর্বাগ্রে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন তখন আমার সঙ্গে গরীব মুমিন বান্দাগণ থাকবে-এতে আমার কোনো অহংকার নেই এবং আমি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের চেয়ে অধিক সম্মানিত-এতে আমার কোনো অহংকার নেই। (তিরমিযী)।
নবী করীম (সা:) বলেন, আমি কিয়ামতের দিন সকল মানুষের নেতা হব। (মুসলিম)
আবু হুরাইরা (রা:) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর চেয়ে অধিক সুন্দর আর কিছুই দেখিনি। তাঁর চেহারা মোবারকে ছিল চলমান সূর্যের ঔজ্জ্বল্য। (তিরমিযী)
আয়শা (রা:) বলেন, একদিন শেষরাতে আমি সেলাইর কাজ করছিলাম, হঠাৎ আমার হাত থেকে সুচটি পড়ে গেল। আমি আর তা খুঁজে পেলাম না এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সা:) আমার ঘরে প্রবেশ করলেন, তার চেহারা থেকে বিচ্ছুরিত উজ্জ্বল্যে আমি সুচটি পেয়ে গেলাম। আমি নবীজীকে এ খবরটি বললাম। এতে প্রিয় নবী (সা:) বললেন :
হে হোমায়রা! হযরত আয়েশা (রা.)-এর অপর নাম বড়ই পরিতাপ, বড়ই পরিতাপ, বড়ই পরিতাপ তাদের জন্য, যারা মোহব্বতের দৃষ্টিতে আমার চেহারার প্রতি তাকিয়ে দেখল না।
(দুররুল মুনাজ্জাম)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমাদের কারোর নিকট তার পিতামাতা, সন্তান-সন্ততি এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন থেকে অধিক প্রিয় না হব ততক্ষণ পর্যন্ত সে মুমিন হতে পারবে না। (বুখারী)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হযরত আদম (আ.) এর সত্তা যখন পানি ও মাটির মধ্যে বিদ্যমান তখনও আমি নবী ছিলাম। (তিরমিযী)
আল্লাহর হাবীব (সা.) বলেন, সেই সত্তার কসম যার অধিকারে রয়েছে আমার জীবন, এ সময়ে যদি তোমাদের নিকট হযরত মূসা (আ.) আগমন করতেন আর তোমরা আমাকে ছেড়ে তাঁর অনুসরণ করতে তা হলেও তোমরা মুক্তির পথ হারিয়ে গোমরা হয়ে যেতে। এমনকি তিনি যদি এ সময়ে জীবিত থাকতেন আর আমার নবুওয়াতের যমানা পেতেন তাহলে তিনিও নিশ্চয়ই আমার অনুসরণ করতেন। (দারেমী, মিশকাত)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আদম (আ.) যখন ভুল করে বসলেন তখন তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ মুহাম্মদ (সা.)-এর উসিলায় আমাকে ক্ষমা করুন। আল্লাহ বললেন : মুহাম্মদ (সা.)-কে তুমি কেমনে চিনলে? আদম বললেন : আপনি যখন আমার দেহকে তৈরি করে তাতে আমার রূহ প্রবেশ করালেন তখন আমি মাথা উঠিয়ে আরশের পায়ায় লিখা দেখলাম “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ তখন আমি বুঝলাম, আপনার সৃষ্টির মধ্যে আপনার সর্বাধিক প্রিয় বন্ধু ছাড়া অন্য কারো নাম আপনি আপনার নামের সঙ্গে যোগ করেননি। আল্লাহ বললেন : হে আদম! তুমি ঠিকই বলেছ। মুহাম্মদ (সা.)-কে সৃষ্টির উদ্দেশ্য যদি আমার না থাকত তবে আমি তোমাকেও সৃষ্টি করতাম না (হাকেম)
বিদায় হজের ভাষণে প্রিয় নবী (সা.) বলেন : “আমি তোমাদের মাঝে দু’টি প্রকাশ্য ও স্পষ্ট জিনিস রেখে যাচ্ছি। যদি তোমরা তা আঁকড়ে ধরে থাকো তাহলে কখনো তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাত।
একের অপরাধে অপরকে শাস্তি দেয়া চলবে না। অতঃপর পিতার অপরাধে পুত্রকে এবং পুত্রের অপরাধে পিতাকে দায়ী করা চলবে না।
নিশ্চয়ই এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সকল মুসলমানকে নিয়ে এক অবিচ্ছেদ্য ভ্রাতৃসমাজ।
আইয়্যামে জাহেলিয়াতের সকল কুসংস্কার, সকল অন্ধবিশ্বাস এবং সকল প্রকার অনাচার আজ আমার চরণতলে দলিত মথিত করলাম।
“নারীদের সম্পর্কে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তাদের সাথে উত্তম আচরণ করো।” (আল হাদীস)
প্রিয় নবী (সা.) বলেন : তোমাদের ব্যাপারে আমি দারিদ্র্যের আশঙ্কা করি না। আমারতো আশঙ্কা যে, না জানি দুনিয়া তোমাদেরকে পেয়ে বসে, যেরূপ তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের পেয়ে বসেছিল। ফলে তাদের মতো তোমরাও দুনিয়াতে আসক্ত হয়ে পড়বে ও তার জন্য কাক্সিক্ষত হবে। আর দুনিয়া তাদেরকে যেভাবে ধ্বংস করেছিল তোমাদেরকেও তদ্রƒপ ধ্বংস করে দেবে। (বুখারী ও মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন : আমার সকল উম্মতই বেহেশতে প্রবেশ করবে, ‘আবার’ দল ছাড়া। জিজ্ঞাসা করা হলো কারাসে ‘আবার’ দল? নবীজী বললেন, যে আমার তাবেদারি করল সে বেহেশতে প্রবেশ করল, আর যে আমার না ফরমানি করল সেই আবা’বা অগ্রাহ্যকারী (বুখারি)
মনীষীদের দৃষ্টিতে
ইমাম আজম আবু হানিফা (রহ.) তাঁর কাসীদায় লিখেন :
খোদার কসম, হে ইয়াসীন
সত্যি তুমি উপমাবিহীন।
ওগো প্রিয় আল্লার রাসূল
তোমার শিক্ষার মাঝে নাই কোথা বিন্দুমাত্র ভুল।
তুমি অনুপম
তব রূপ, তব গুণ বর্ণনায় অধম অক্ষম।
দার্শনিক কবি আল্লামা ইকবাল (রহ.) লিখেন :
প্রতিটি মুমিনের হৃদয়কেই তার প্রকৃত মাহবুব হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)-এর ভক্তি শ্রদ্ধার, প্রীতি-ভালবাসার সর্বোচ্চ স্থান দখল করে আছেন। কারণ, তিনিই যে মুমিনের প্রকৃত সম্পদ এবং মাহবুব, তারই প্রেম মাধুরী মুমিনের অন্তরে শক্তি ও সাহস যোগায়, জীবনী শক্তিহীন আত্মায় নব চেতনার সঞ্চার করে। মানুষ যখন আত্মমর্যাদা ও আত্মপরিচয় বিস্মৃত হয়ে অধপতনের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছিল, মানবতার এমনই এক দুর্দিনে বিশ্বমানবের প্রকৃত সুহৃদ ও কল্যাণকামী ত্রাণকর্তা, মুক্তিদাতা হযরত মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (সা.) মুক্তির জিয়নকাঠি নিয়ে আবির্ভূত হন। আত্মভোলা মানুষকে তিনি আত্মোপলব্ধির আহ্বান জানান। পথহারা মানুষকে তিনি দান করেন সঠিক পথের সন্ধান। তার প্রদর্শিত পথের পথিক হয়েই মুমিন আত্মপরিচয় লাভে ধন্য হয়েছে, পেয়েছে মুক্তিপথের সন্ধান। তাই তার অন্তরে এই মহামানবের প্রতি এত শ্রদ্ধা, ভক্তি ও প্রেম সুধার অন্তহীন ফল্গুধারা সদা প্রবাহিত। দুনিয়ার যে কোন ব্যক্তি ও বস্তুর তুলনায় তারই প্রতি মুমিনের সর্বাধিক হার্দ্য আকর্ষণ। কারণ তারই বদৌলতে মুমিন তার হারানো সম্পদ ফিরে পেয়েছে, শ্রষ্টা থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে তার সান্নিধ্য লাভের পথ খুঁজে পেয়েছে। চরম অবহেলিত লাঞ্ছিত ও অপমানিত জিন্দেগীর গ্লানী মুক্ত হয়ে উন্নত ও মর্যাদাপূর্ণ জিন্দেগীর আস্বাদ ফিরে পেয়েছে। জগতের বুকে নিজেদের জন্যে এক মর্যাদাপূর্ণ আসন নির্ণয় করে নিতে সক্ষম হয়েছে। শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও চারিত্রিক দিক থেকে একটি উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করে নেয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছে। আর এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)-এর বদৌলতে। কারণ তিনিই বিশ্ববাসীকে এক উন্নত জীবন বিধান, এক উন্নত রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও উন্নত সভ্যতা উপহার দিয়েছেন। মুসলিমগণ এই সম্পদে সম্পদশালী হয়েই গৌরব মর্যাদার আসনে সমাসীন হয়েছে। কাজেই মুসলিম মিল্লাতের সকল প্রকার গৌরব ও মর্যাদার উৎসই হচ্ছেন নবী মুস্তফা (সা.)।
(সীরাতুন্নবী স্মারক, ১৪১৯ হি:)।
No comments:
Post a Comment