প্রশ্ন --> ফেসবুক ইউজ করা কি নাজায়েজ?অনেকে বলে এটা বিধর্মীরা তৈরী করেছে তাই মুছলিমদের তা ব্যবহার করা যাবে না।এটা বিদআত।নবআবিষ্কার।যদি জায়েজ হয় তাহলে সঠিক ব্যবহার বিধি জানাবেন।
উত্তর:
ফেসবুক ব্যবহার নাজায়েজ নয় । এটি শর্ত সপেক্ষে জায়েজ ।
কোন কিছু বিধর্মীরা তৈরি করেছে তার সাথে জায়েজ নাজায়েজের কোন সম্পর্ক নেই ।
# আবূ নাজীহ ইরবায সারিয়াহ(রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ(সাঃ) আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুনালেন যে, তাতে অন্তর ভীত হল এবং চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল। সুতরাং আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ যেন বিদায়ী ভাষণ মনে হচ্ছে। তাই আমাদেরকে অন্তিম উপদেশ দিন। তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং ( ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনেতার) কথা শোনার ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো(আফ্রিকার কৃষ্ণকায় অধিবাসী) রাষ্ট্রনেতা হয়। (স্মরণ রাখ) তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের রীতিকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁত দিয়ে মজবুত করে ধরে থাকবে। আর তোমরা দ্বীনে নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ(বিদ’আত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদ’আতই ভ্রষ্টতা। [ আবূ দাউদ ৪৬০৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, মুকাদ্দিমা, নং ৪২; মুসনাদে আহমাদ, মুসনাদ আশ-শামিয়্যিন, নং ১৬৫২২; দারেমী ৯৫]; নাসায়ীর বর্ণনায় অতিরিক্ত আছে, “আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতাই হল জাহান্নামের পথ।” [সুনান নাসায়ী ১/৫৫]
এবার দেখি বিদআত কি জিনিস।
ইসলাম মানুষের জীবনের কাজগুলোকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করেছেঃ
ইবাদাত (যা কেউ মুসলিম হওয়ার কারণে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করে - নামায, রোযা, কুরআন পাঠ ইত্যাদি )
মু’মালাত (যা কেউ মানুষ হওয়ার কারণে জৈবিক প্রয়োজনে করে- খাওয়া, ঘুম, চাকরি ইত্যাদি)
ইসলামে সকল ইবাদাতের একমাত্র উৎস হল ওহী।তাই এক্ষেত্রে নতুন যেকোন কিছু হচ্ছে হারাম যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল শিখিয়ে গেছেন, তা ব্যতীত। কেউ যদি আপনাকে বিশেষ কোন আমল শেখায় তবে মূল নিয়ম হচ্ছে তা নিষেধ, যতক্ষণ না আপনি প্রমাণ পাচ্ছেন যে এটা সহীহ সুন্নাহ তে আছে, সাহাবীরা করেছেন!
অন্যদিকে মু’মালাতের ব্যাপারে সবকিছু হালাল যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল নিষেধ করে গেছেন, তা ব্যতীত। কেউ যদি আপনার সামনে কোন খাবার নিয়ে আসে, তবে মূল নিয়ম হচ্ছে তা জায়েজ, যতক্ষণ না আপনি প্রমাণ পাচ্ছেন যে এটা সহীহ সুন্নাহ বা কুরআনে নিষেধ করা হয়েছে।
সুতরাং ফেসবুক ব্যবহার বিদআত নয় যদি না মনে করেন ফেসবুক ব্যবহার করলে অনেক সওয়াব হবে ।
এবার ব্যবহার বিধি :
ফেসবুকে অনেকে অশ্লীলতার প্রসার ঘটায় । তাদের হতে দূরে থাকতে হবে । তাদের কোন পেজ, পোস্ট পড়া হতে বিরত থাকতে হবে । আপনার একটি লাইক দেওয়ায় তা আপনার দ্বীনী ভাইদের ওয়ালে চলে যায় এতে তারা বিব্রত হন । এবং সকলের যা গুনাহ হবার কথা তা আপনার একাই হবে ।
সারা পৃথিবীর দ্বীনী ভাইদের সাথে যোগাযোগের একটি উত্তম মাধ্যম এটি । তাই একে দ্বীন প্রচার ও প্রসারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে ।
বিপরীত লিঙ্গের আইডির সাথে যোগাযোগ হতে সাবধান হতে হবে যেন তা কোন হারামের পথে চলে না যায় ।
ইসলামকে হেয় করে এমন কাফেরদের প্রচারণা যুক্তিযুক্ত ভাবে যায় রুখে দিতে হবে ।
দেখতে হবে যেন সময়ের অপচয় না হয়।
এখানে গীবত ছড়ায় দ্রুত । এটা হতে সতর্ক থাকতে হবে ।
ফেসবুক একটি বাজারের মত । এই বাজারে রাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে ঝগড়া করার মত ফেসবুকে ঝগড়া করা হতে বিরত থাকতে হবে ।
হারাম বস্তু যেমন হারাম দৃশ্য সম্বিলিত মুভি, সিরিয়াল (বর্তমানে হারাম নাই এমন বিরল ) , ভিডিও, গান , গেম ইত্যাদির প্রচারণা করা যাবে না । মনে রাখতে হবে আপনার দ্বারা যতজন অপকৃত হবে ততজনের পাপের ভার কিন্তু আপনার উপরোও বর্তাবে ।
পছন্দের ইসলামিক পেজে লিঙ্ক দিয়ে এবং বন্ধুদের তাতে আহ্বান করে আমরা আসলে দা’ওয়াহর কাজটি করব - যা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য বাধ্যতামূলক।
সর্বোপরি যেন এতে কোন ফরজ ইবাদতে (যেমন জামাতে সালাত আদায় ) ছুটে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ।
আশা করি বুঝাতে সক্ষম হয়েছি । শেয়ার করুন প্লিজ।
No comments:
Post a Comment